1, Aug 2025
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদেনা মোহাম্মদ: দরুদ পাঠের ফজিলত ও গুরুত্ব

ইসলাম শান্তি, ভালোবাসা ও রহমতের ধর্ম। এই ধর্মের শ্রেষ্ঠ রাহবার হলেন হযরত মুহাম্মদ (সা.), যাঁর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের কাছে কোরআন এবং ইসলামের পূর্ণতা পৌঁছে দিয়েছেন। একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের জীবনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অপরিহার্য। এই ভালোবাসা প্রকাশের অন্যতম পবিত্র মাধ্যম হলো তাঁর প্রতি দরুদ পাঠ করা। আর এই দরুদের সবচেয়ে প্রচলিত রূপটি হলো—আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদেনা মোহাম্মদ

রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ: ঈমানের প্রতীক

দরুদের অর্থ ও তাৎপর্য

“আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদেনা মোহাম্মদ” অর্থ হলো—”হে আল্লাহ! আপনি শান্তি বর্ষণ করুন আমাদের নেতা হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি।” এই বাক্যটিতে রয়েছে সম্মান, প্রার্থনা এবং অনন্ত ভালোবাসার প্রতিফলন। একজন মুসলিম যখন এই দরুদ পাঠ করেন, তখন তিনি আল্লাহর দরবারে রাসূল (সা.)-এর প্রতি রহমত কামনা করেন। আর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হলে তা কেবল রাসূল (সা.)-এর ওপর সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং সেই দরুদ পাঠকারীও তাঁর ছায়ায় আস্রয় লাভ করেন।

কোরআন ও হাদিসে নির্দেশ

কোরআনে বলা হয়েছে:

“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা নবীর প্রতি দরুদ পাঠ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠ করো।” (সূরা আহযাব: ৫৬)

এই আয়াত থেকেই বোঝা যায় দরুদ পাঠ কেবল পুণ্যের কাজই নয়, বরং এটি আল্লাহর একটি নির্দেশও।

দরুদ পাঠের উপকারিতা

পাপ মোচন ও রহমতের দরজা খুলে যায়

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দরুদ পাঠ করে, আল্লাহ তা’আলা তার জন্য দশটি রহমত নাজিল করেন, দশটি গোনাহ মাফ করেন এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।” (হাদিস: মিশকাত)

এই হাদিস প্রমাণ করে, দরুদ শুধু মুখের যিকির নয়, এটি আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যম।

দোয়া কবুলের পথ প্রশস্ত করে

দোয়া করার সময় দরুদ পাঠ দোয়া কবুলের একটি বড় মাধ্যম। অনেক আলেম বলেন, দোয়ার শুরু এবং শেষে দরুদ পাঠ করলে তা দোয়ার গৃহীত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

অন্তরে প্রশান্তি ও মুখে নূর আসে

নিয়মিত দরুদ পাঠ করলে মানুষের মুখমণ্ডলে প্রশান্তি আসে এবং অন্তরে আল্লাহর ভালোবাসা সৃষ্টি হয়। এটি আত্মিক প্রশান্তির অন্যতম মাধ্যম।

দৈনন্দিন জীবনে দরুদ পাঠের গুরুত্ব

প্রতিদিনের রুটিনে দরুদ অন্তর্ভুক্ত করা

অফিসে, রাস্তায়, ঘুমানোর আগে কিংবা নামাজের পরে—যে কোনো সময়েই দরুদ পাঠ করা সম্ভব। এটি এমন এক আমল, যা সামান্য সময় ও পরিশ্রমেই অনেক সাওয়াব অর্জনের সুযোগ করে দেয়।

দরুদ পাঠের মাধ্যমে সীরাতকে স্মরণ

দরুদ পাঠ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমরা কার উম্মত। এই পাঠ আমাদেরকে প্রেরণা দেয় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনাদর্শ অনুসরণে এবং তাঁর নীতি ও চরিত্রকে জীবনে বাস্তবায়ন করার।

উপসংহার

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি দরুদ পাঠ করা শুধু একটি ইবাদত নয়, বরং এটি আমাদের ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আনুগত্যের প্রতীক। প্রতিদিন কিছু সময় বের করে যদি আমরা দরুদ পাঠে অভ্যস্ত হই, তবে আত্মা হবে পরিশুদ্ধ, জীবনে আসবে বরকত ও প্রশান্তি। তাই আসুন, নিয়মিতভাবে আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়েদেনা মোহাম্মদ পড়ে আমাদের প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করি এবং আল্লাহর রহমত লাভে ধন্য হই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *